নাছির হোসাইনঃ পাবনার বেড়ায় অসময়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে যমুনা নদীতে। গত দুই মাস ধরে এই ভাঙন অব্যাহত থাকায় দুশ্চিন্তায় দিশেহারা নদীপাড়ের বাসিন্দারা। হুমকির মুখে পড়েছে কবরস্থান, মসজিদ, মাদরাসাসহ অসংখ্য ঘরবাড়ি, কৃষিজমি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বালুখেকোরা ড্রেজার দিয়ে নদীর তলদেশে বালু তোলায় অসময়ে ভাঙছে যমুনা। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই উপজেলা প্রশাসনসহ নৌ-পুলিশের। তবে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলে বালু উত্তোলনের এই মহোৎসব। ইতোমধ্যে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শণ করে প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) সরেজিমনে গিয়ে দেখা গেছে, বেড়া উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের নেওলাইপাড়া গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে যমুনা নদী। চরাঞ্চলের গ্রামটিতে এবার অসময়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে নদীতে। শুধু লেওলাইপাড়া গ্রামই নয়। পার্শ্ববর্তী নতুন বাটিয়াখড়া ও মরিচাপাড়া গ্রামেরও একই চিত্র।
যমুনা নদীর তীরবর্তী এই তিনটি গ্রামে বসবাস প্রায় এক হাজার পরিবারের। গত দুই বছরে প্রায় পাঁচশ’ পরিবার হারিয়েছে বসতভিটা। নদীতে বিলীন হয়েছে প্রায় এক হাজার বিঘা জমি। এবছর বর্ষা মৌসুমের অনেক আগেই অসময়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে যমুনা নদীতে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত দুই মাস ধরে অব্যাহত রয়েছে যমুনা নদীর ভাঙন। তীব্র স্রোতে গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় ভাঙছে নতুন চর। এতে দুশ্চিন্তায় দিশেহারা নদীপাড়ের বাসিন্দারা। বলছেন, ধীরে ধীরে ভাঙন এগিয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ির দিকে। হুমকির মুখে পড়েছে মসজিদ, মাদরাসা, কবরস্থান।
লেওলাইপাড়া গ্রামের ইমদাদুল হক বলেন, নদী আগে অনেকদূর ছিল। ভাঙতে ভাঙতে কাছে চলে আসছে। নদীর স্রোতও ছিল অনেকদূরে। গতিপথ পরিবর্তন করে তীরবর্তী এলাকায় স্রোত হচ্ছে। ফলে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে।
সালেহা খাতুন ও মজিরন বেওয়া বলেন, এভাবে ভাঙতে থাকলে তো আমাদের বাড়িঘর, মসজিদ, মাদরাসা, গোরস্তান নদীর পেটে চলে যাবে। সরকার থেকে কিছু একটা না করলে তো আমাদের সব শেষ হয়ে যাবে। ভাঙন ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।
বাটিয়াখড়া গ্রামের বাসিন্দা আফতাব হোসেন, রফিকুল ইসলাম, নেওলাইপাড়া গ্রামের মতিন হোসেন বলেন, বিগত বছরগুলোতে নদীর পেটে এক হাজার বিঘার মতো জমি চলে গেছে। বসতভিটা হারিয়েছে ৫০০ পরিবারের মতো। একটি অসাধু চক্র নদীতে ড্রেজার বসিয়ে অবাধে বালু তোলার কারণে অসময়ে স্রোত দেখা দিয়েছে। এটা বন্ধ করা দরকার।
পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কাজ করার অনুমতি চেয়ে নোট সিট প্রেরণ করেছি। মৌখিকভাবেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত সোমবার (৭ এপ্রিল) পুনরায় ভাঙ্গন কবলিত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়েছে। পরিদর্শনকালে ঊর্ধ্বতন ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে কাজ বাস্তবায়নের জন্য অনুমতি পাওয়া গেছে। আমরা আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ করে দ্রুতই এর কাজ শুরু করবো।’